Skip to main content

Learn Finance and Tech

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের সমস্যা কী?

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের সমস্যা কী?

সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দিবো কোথা?

প্রধান সমস্যার কথা বলি- শেয়ারবাজারের লোকজন নিজের কাজটা বাদ দিয়ে বাকি সব কাজ করে বেড়ান।

প্রথমেই সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কথা বলি- শেয়ারের দাম কমানো কিংবা বাড়ানো সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাজ নয়। বাংলাদেশের এসইসি বছরের পর বছর ধরে এই কাজ করতে চাচ্ছে, করছে।

কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লে এসইসি সেই কোম্পানিকে নোটিশ পাঠায়। জানতে চায়- অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আছে কি না...।

স্ট্রেঞ্জ! রিডিকিউলাস!! বিজার!!!

যথাসময়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা কোম্পানির ডিউটি, রেস্পন্সিবিলিটি। কোম্পানি সেইটা না করলে এসইসির কাজ হলো কোম্পানির লোকজনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। এখন, এসইসি যদি জানতে চায়, ভাই, আপনি আইন ভাঙছেন?- কেমন লাগে?

একটা কোম্পানির ২০ টাকার শেয়ারের দাম কয়েকদিনের মধ্যে বেড়ে ৪০ টাকা হলে এসইসি বেকুবের মতো কোম্পানির কাছে নোটিশ দেয়- দাম কেনো বাড়লো? কোম্পানি আবার উত্তর দেয়- তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই! এইসব সার্কাস আবার স্টক এক্সচেঞ্জ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। সার্কাস আবার শেয়ারের দামকে প্রভাবিতও করে।

এরকম আজাইরা কাজ দুনিয়ার আর কোনো দেশের সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা করে কি না, আমার জানা নেই।

শেয়ারের দাম বাড়লে নোটিশ দেয় এসইসি। কমলে কিন্তু নোটিশ দেয় না। একশো টাকার শেয়ারের দাম ১০ টাকায় নামলেও নোটিশ দেওয়ার নজির নেই।

কোনো শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়লে এসইসি তদন্ত কমিটি করে! কী হাস্যকর!!

শেয়ারের দাম বাড়বে, কমবে- এটাই স্বাভাবিক। সারা দুনিয়ায় অসংখ্য শেয়ারবাজার আছে। সব শেয়ার বাজারেই শেয়ারের দাম ওঠানামা করে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তো একদিনে শেয়ারের দাম বাড়া-কমার সীমারেখা আছে। একে সার্কিট ব্রেকার বলে। একদিনে একটা শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ১০% কমতে পারে, সর্বোচ্চ ১০% বাড়তে পারে। আমেরিকার শেয়ারবাজারে এরকম কিছু নেই। দশ ডলারের একটা শেয়ার ৩০০ ডলার হতে পারে একদিনে, ৩০০ ডলারের একটা শেয়ার ১০ ডলারে নেমে যেতে পারে একদিনে। আমেরিকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ ব্যাপারে কখনো কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে- এরকম কিছু জানা নেই।

আবার, শেয়ারবাজারে যখন ধ্বস হয়, তখন বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রকেরা বাজারসংশ্লিষ্ট নানা পক্ষের সাথে মিটিং করেন। নানা নিয়মকানুন অদলবদল করেন। সরকারের অন্য সংস্থার সাথে দেনদরবার করেন।

এইসব কী ভাই? শেয়ারবাজারে শেয়ারের দাম বাড়ানো কিংবা সূচক বাড়ানো এসইসির কাজ- এরকম আজব কথাবার্তা শুধু বাংলাদেশেই শোনা যায়।

এসইসির কাজ আসলে কী?

এসইসির কাজ হলো শেয়ারবাজারের জন্য নিয়ম তৈরি করা এবং সেগুলো প্রতিপালন নিশ্চিত করা।

নিয়ম অনেক রকমের হতে পারে- কোন কোম্পানি, কোন ক্রাইটেরিয়াতে বাজার থেকে মূলধন উত্তোলন করতে পারবে, বাজারে ট্রেডিং এ কী কী নিয়ম অনুসৃত হবে, কোম্পানির পরিচালকরা নিজেদের শেয়ার কী করতে পারবেন, কোম্পানি কী কাজে জড়িত হতে পারবে, কী কাজে জড়িত হতে পারবে না, পরিচালকরা যাতে কোম্পানির সম্পদ নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতে না পারেন, কোম্পানি যাতে বিধি মোতাবেক লভ্যাংশ দেয়, মার্কেট মেকাররা যাতে সঠিক ভূমিকা পালন করে- ইত্যাদি অনেক রকমের নিয়ম তৈরি করা এবং সেগুলোর প্রতিপালন নিশ্চিত করা এসইসির কাজ।

বাংলাদেশের এসইসি পচা-ধচা, মরা-ধরা কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে মরিয়া। ভূয়া সম্পদ দেখিয়ে, মেইড আপ ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট দেখিয়ে, নানাবিধ জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে অসংখ্য কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে বিগত এক দশকে। এইসব কোম্পানির চটকদার ফাইন্যান্সিয়াল ডাটা দেখে বিভ্রান্ত হয়ে বিনিয়োগকারীরা বেশি দামে শেয়ার কেনেন। কোম্পানি বাজারে আসার ১/২ বছরের মধ্যেই রুগ্ন হয়ে যায়, ডিভিডেন্ড দিতে পারেনা, প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায়। দায় কার? এসইসির।

বাজারে ট্রেডিং হয় কম্পিউটার সফটওয়্যার এর মাধ্যমে। ট্রেডিং এ সারা দুনিয়ায় অল্প কিছু নিয়ম আছে- সিরিয়াল ট্রেডিং করা যাবেনা, ইনসাইডার ট্রেডিং করা যাবে না, স্পুফিং করা যাবেনা। এইসব অপরাধ রিয়েল টাইমে শনাক্ত করার টুল সারা দুনিয়ায় এভেইলেবল। বাংলাদেশের এসইসি এইসব কাজ পারে না। তাদের সার্ভেইল্যান্স টিম নিজেরাই এইসব অপরাধীদের সাথে সম্পৃক্ত!

শেয়ারবাজারে কেউ নিয়ম মানেনি, তাকে রিয়েল টাইমে শাস্তি দিতে হবে এবং শাস্তি তৎক্ষণাৎ কার্যকর করতে হেব। বাংলাদেশের এসইসি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির আঠারো মাসে বছর। রিপোর্ট দিতে দিতে অপরাধী পগারপার।

সারা দুনিয়ায় আজকে শেয়ার কিনে আজকেই বেচে দেওয়া যায়। বাংলাদেশের টি+১, টি+২, টি+৯ এর সার্কাস আছে। এ ব্যাপারে কাজ করতে নারাজ এসইসি।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে আরেক আজাব হইলো ক্যাটাগরি সিস্টেম। শেয়ারের ক্যাটাগরি আছে- এ, বি, এন, জেড। কোনো কোম্পানি ডিভিডেন্ড দিতে ব্যর্থ হলে সেই কোম্পানির শেয়ারকে জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়া হয়। ফলাফলে শেয়ারের দাম কমে যায় তৎক্ষনাৎ, একটানে ১০-২০-৩০%।

ডিভিডেন্ড না দিয়ে অপরাধ করেছে কোম্পানির। কোম্পানির শেয়ার জেড ক্যাটাগরিতে নামালে সেই অপরাধের দোষে শাস্তি পান বিনিয়োগকারী। কেনো?

বাংলাদেশের আইনে আছে- কোম্পানির ডাইরেক্টররা সম্মিলিতভাবে কোম্পানির মোট শেয়ার এর ৩০% ধারণ করবেন। বছরের পর বছর ধরে অনেক কোম্পানির ডাইরেক্টররা এই নিয়ম ভঙ্গ করে আসছেন। এ ব্যাপারে এসইসির চোখে টিনের চশমা। ডাইরেক্টর হোল্ডিং আইনানুগ করার জন্য কোনো ব্যবস্থা নাই।

আইন আছে, কোম্পানির ডাইরেক্টররা এসইসির বিনা অনুমতিতে নিজেদের শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবেন না। তাহলে, টোটাল ডিরেক্টর হোল্ডিং ১/২/৫/১০% হয় কীভাবে?

কোম্পানির শেয়ারের দাম ফেইস ভ্যালুর নীচে নেমে গেলে বাইব্যাক করার কথা কোম্পানির। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের অর্ধেকের বেশি কোম্পানির শেয়ারের দাম ফেইস ভ্যালুর নীচে। একটা কোম্পানিকেও কি একটা শেয়ার বাইব্যাক করিয়েছে এসইসি?

তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয়-ব্যয়ে এসইসির নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার। সেই সক্ষমতা আছে এসইসির?

একটা কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলো- এর অর্থ এসইসি সেই কোম্পানির কার্যক্রম তদারকি করবে। ৪০০ কোম্পানির কার্যক্রম তদারকি করার জন্য ৪০০ লোক আছে এসইসিতে? এসইসি'র মোট লোকবলই তো ৪০০ হবে না বলে আমার বিশ্বাস।

শেয়ারবাজার নিয়ে কতো কিছু করার আছে! শুধু নিয়ম প্রতিপালনই নিয়, শেয়ারবাজারে মানুষের অলস টাকা নিয়ে আসার জন্য পদক্ষেপ নেওয়াও এসইসির কাজ। শেয়ারবাজারে বিভিন্ন রকম প্রোডাক্ট (কমোডিটিজ, ফিউচার, বন্ড) আনা এসইসির কাজ। ভালো এবং মৌলভিত্তির কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা এসইসির কার। এসব কাজ এসইসি ঠিকঠাক করে?

সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা নিয়ন্ত্রণকারী একটা সংস্থার সাড়ে ছয়শো লোকবল নাই। হাউ ফানি!

শেয়ারবাজার এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে, আগে এসইসি ঠিক করা হউক। এসইসি যাতে নিজের কাজ ঠিকঠাক করে- এইটা নিশ্চিত করা হউক।

চন্দন আজিজ | Post Link | 30 May 2025


  • Blog authors: Digest2025
  • Title: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের সমস্যা কী?
  • Last updated: 

Comments